মাথায় ভোঁ ভোঁ ধরিয়ে দেয়া পেট্রলের কড়া গন্ধ, ঠিক কোনদিক থেকে আসছে বোঝা যাচ্ছেনা। পাশের সিটের মানুষটা পা দুটো ছড়িয়ে প্রায় দেড়জনের যায়গা দখল করে বসে আছেন, গায়ের সাথে গা লেগে কার ঘাম কোনগুলো বুঝার কোন উপায় নেই।

তার ফাক করা পা দুটোর নিচে একটা হলদে বস্তা রাখা, সেটা থেকে হালকা ঘোলা ধরনের একটা তরল বের হয়ে বাসের পিছের সারিতে গা ঘেষে বসা পাঁচজনের প্রায় সবার পায়েই গিয়ে লেগেছে। সোলেমান সাহেব বেল্টের জুতা পড়ে আছেন, সেন্ডেল পরে যারা বসা তাদের পা চটচটে হয়ে গেছে। একজন বস্তাওয়ালার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও আবার না বলে মুখের ভিতর রেখে চ-বর্গীয় কোন একটা গালি দিলেন। বস্তার ভিতর থেকে মাছের গন্ধ আসছিলো। মাছের গন্ধ কি সেখান থেকেই আসছিলো, নাকি গত আধা ঘন্টা জ্যামে পড়ে থাকা বাসের ঠিক পাশের সিটি কর্পোরেশন ডাস্টবিন থেকে আসছিলো তা বোঝার কোন উপায় নেই।

পেট্রল, মাছ আর ডাস্টবিনের গন্ধ মিশে বাতাসে যে গন্ধটা তৈরি হয়েছিলো, তা বায়োলজিকাল ওয়েপন বলে চালিয়ে দেয়া কোন ব্যাপার না। ভাগ্যিস দেশে তেল টেলের ক্ষনি টনি অত নেই, ভাবলেন সোলেমান সাহেব। একটু সামনেই একটা এম্বুলেন্স আটকা পড়ে ছিলো, সেটার চাপা সাইরেনের আওয়াজটা যেন যথেস্ট ছিলোনা, পিছনের একটা পুরনো মডেলের টয়োটা গাড়ি জ্যাম দেখা শর্তেও হর্ন বাজানো শুরু করলো।

বাসের আগা থেকে গোড়া জোড়ায় জোড়ায় মানুষ দাড়ানো, দুদিকে মুখ করা। নামতে প্রচুর ধাক্কা ধাক্কি করতে হবে, মানুষের পায়ে পা পড়বে, নেমেই মুখে পড়বে সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিন, যেটার ভিতরের চাইতে বাইরেই ময়লা বেশী। তাই সোলেমান সাহেব নেমে যাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছেটাকে দমন করে বসে থাকলেন। তিনি সাধারনত জ্যামে বেশীক্ষন বসে থাকেন না, নেমে হেটে পার হয়ে যান। যদিও প্রায় সময়ই তিনি নামার পরপরই জ্যাম ছুটে যায়।

সোলেমান সাহেবের পাশের লোকটা বেশ জোরে একটা হাঁচি দিলেন, বস্তাওয়ালা ব্যাক্তি নন, চ-বর্গীয় গালি ওয়ালা ব্যাক্তি। মুখে হাত না দেয়ায় হাচির বেশ কিছু তরল সোলেমান সাহেবের প্যান্টের হাটুতে গিয়ে পড়লো, চটচটে মশার লার্ভার মত। লোকটা চারপাশে এমনভাবে তাকালো যেন কিছু হয়নি, এরপর বেশ আওয়াজ করে বললো আলহামদুলিল্লাহ।

প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট এই অবস্থায় দাড়িয়ে থাকার পর সামনের জ্যাম ছেড়ে দিলো। অল্প কিছুদূর এগিয়েই বাস আবার থেমে গেল। স্টপেজে হেলপার ছাড়া কেউ নামলো না। সে কিভাবে যেন ফাঁক গলে নেমে গেল। হেল্পার নেমে পরবর্তী স্টপেজের নাম বলে বলে যাত্রী ডাকতে লাগলো, সোলেমান সাহেব বাসের ঠিক কোন দিকে নতুন যাত্রী তোলার যায়গা আছে তা খোজার চেস্টা করলেন কিন্তু পেলেন না, কিন্তু তিন চারজন যাত্রী ঠিকই কিভাবে যেন উঠে গেল। তিনি হাত উচু করে ঘড়িতে সময় দেখলেন, অফিস থেকে তিনি বের হয়েছিলেন সাড়ে ছয়টার দিকে, ঘড়িতে বাজছে আটটা বায়ান্ন। তার বাসায় পৌছুতে আরো আধাঘন্টা প্রায় লাগবে, মানে রাত সাড়ে নয়টা। কাল আবার অফিস আছে নয়টায়, তার বাসা থেকে বের হওয়া লাগবে অন্তত সাতটায়।

সোলেমান সাহেবের যায়গায় অন্য কেউ হলে হয়ত এই মূহর্তে খুব করুন একটা দীর্ঘ:শ্বাস ফেলতো। সোলেমান সাহেব কোন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন না, তিনি ভাবছিলেন বস্তার আকার আকৃতি এবং গন্ধ থেকে তিনি ভিতরে কি মাছ আছে তা অনুমান করতে পারবেন কিনা। অনুমান সঠিক হলেই তার মন ভাল হয়ে যাবে। সোলেমান সাহেব খুব অল্পতেই সন্তুষ্ট হওয়া একজন মানুষ।

প্রথম রচিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬